Electro-Magnetism
বিষয়:বেসিক ইলেকট্রিসিটি
Part- 9
ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিজম
(Electro-Magnetism)ঃ
চৌম্বক-ক্ষেত্র,
চৌম্বক বল-রেখা এবং এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of magnetic field, magnetic lines of force and its
properties) ঃ
চৌম্বকক্ষেত্র
(Magnetic field)ঃ
একটি চুম্বকের চার দিকে যতটুকু স্থান বা এলাকা জুড়ে ঐ চুম্বকের প্রভাব বিদ্যমান থাকে, ঐ স্থান বা এলাকাকে চৌম্বক-ক্ষেত্র বলা
হয়।
তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করা হয়, চৌম্বক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি অসীম
পর্যন্ত। কিন্তু বাস্তবে এটা সম্ভব
নয়, বরং একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত এর প্রভাব লক্ষ করা যায় ।
চৌম্বক
বল-রেখা (Magnetic lines of force) ঃ
একটি চুম্বকের চারদিকের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব বা বল
বুঝার জন্যে কতকগুলো রেখা কল্পনা করা , উক্ত কাল্পনিক রেখাগুলোকে চৌম্বক বল-রেখা
বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য
(Characteristics) ঃ
চৌম্বক বল-রেখার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম বা প্রকৃতিগত
স্বভাব আছে, নিম্নে তা
দেয়া হলো,
১। চৌম্বক বল-রেখা সর্বদাই বদ্ধ থাকে, কোথাও কোন ফাক নেই ।
২। চুম্বকের বাইরে বলরেখাগুলো উত্তরমেরু হতে বের হয়ে
দক্ষিণমেরুতে গিয়ে শেষ হয় এবং চুম্বকের ভিতরে দক্ষিণ-মেরু হতে উত্তরমেরুতে গিয়ে
শেষ হয় ।
৩। বল-রেখা একটি অন্যটিকে কখনও ছেদ করে না বরং একটি
অন্যটির স্পর্শক ।
৪। বল-রেখা একটি অন্যটির উপর আড়াআড়িভাবে পাশ্বচাপের সৃষ্টি করে বিধায় পরস্পরের
মধ্যে বিকর্ষণ হয়।
৫ । চৌম্বক বল-রেখাগুলো এদের দৈর্ঘ্য বরাবর স্থিতিস্থাপক
(Elasticity) বস্তুর ন্যায় সংকুচিত হয়।
৬। চৌম্বক বল-রেখাগুলো চৌম্বক পৃষ্ঠের সাথে লম্বভাবে উত্তর
মেরু হতে বের হয়ে দক্ষিণ মেরুতে প্রবেশ করে ।
ফিল্ডইনটেনসিটি
এবং ফ্লাক্স-ডেনসিটি(Field
intensity and flux density)
ঃ
ম্যাগনেটিক
ফিল্ড ইনটেনসিটি (Magnetic Field Intensity) ঃ
একটি চৌম্বক-ক্ষেত্রের যে-কোন স্থানে এক একক বিশিষ্ট বা
বিচ্ছিন্ন
উত্তর-মেরু ( বাস্তবে
একটি বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরু পাওয়া অসম্ভব, কেননা একটি চুম্বকের দু'টি মেরু অবশ্যই
থাকতে হবে) স্থাপন করলে যে বল অনুভূত হয়, উহাকে উক্ত স্থানের চৌম্বক ক্ষেত্রের
প্রাবল্য বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড ইনটেনসিটি বলে। এর
প্রতীক H.
এস. আই পদ্ধতিতে এর একক,
নিউটন/ওয়েবার (Nw/wb)
অ্যাম্পিয়ার-
টার্ন/মিটার ( At/m)
এখানে,
অথবা, ম্যাগনেটিক ফ্লারের পথ-বরাবর প্রতি একক দৈর্ঘ্যের ম্যাগনেটোমোটিত ফোস্ (Magneto-motive Force বা mmf)
ম্যাগনেটিক ফিল্ড ইনটেনসিটি বলে।
H = T ÷ L অ্যামপিয়ার - টার্ন / মিটার ।
ম্যাগনেটিক
ফ্লাক্স-ডেনসিটি ( Magnetic
Flux Density)ঃ
প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ফ্লাক্সের পরিমাণকে ফ্লাক্স ডেনসিটি বা ফ্লাক্স
ঘনতা বলে।
এর প্রতীক B.
ক) সি. জি. এস. পদ্ধতিতে ‘গস' (Gauss).
1 ‘গজ' = 1 ম্যাক্স- ওয়েল/বর্গসেন্টিমিটার।
= 1 লাইনস/বর্গসেন্টিমিটার
খ) এস. আই পদ্ধতিতে ‘ওয়েবার/ বর্গমিটা
অ্যাবসলুট পারমিয়্যাবিলিটি এবং রিলেটিভ
পারমিয়্যাবিলিটির মধ্যে পার্থক্য (Difference between absolute permeability and relative
permeability) ঃ
অ্যাবসলুট পারমিয়্যাবিলিটি (Absolute
Permeability)ঃ
কোন পদার্থে যে পরিমাণ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স প্রতিষ্ঠা করা
যায়, অথবা
কোন পদার্থে চৌম্বক ক্রিয়া যত সহজে প্রতিষ্ঠা করা যায়,
উহাকে আ্যাস্যুট পারমিয়াবিলিটি বলে।
কাচা লোহাকে সহজেই চুম্বকে পরিণত করা যায় এবং এর
পারমিয়্যাবিলিটি সবচেয়ে বেশি। ইস্পাতকে চুম্বকে পরিণত করা কঠিন এবং এর পারমিয়্যাবিলিটি
অনেক কম। এর প্রতীক (মিউ)।
একক,
সি. জি. এস. পদ্ধতিতে এর কোন একক নাই ।
এস. আই. পদ্ধতিতে এর একক হেনরি/ মিটার।
বায়ুশূন্য স্থানে পারমিয়্যাবিলিটির সংকেত (মিউo),
এবং এর মান 4π x 10^-7 ধরা
হয় ।
রিলেটিভ
পারমিয়াবিলিটি (Relative Permeability)ঃ
কোন পদার্থের রিলেটিভ পারমিয়াবিলিটি উক্ত পদার্থে প্রতিষ্ঠিত
ফ্লাক্স (যখন উক্ত পদার্থের চারদিকে এবং ভিতরে লোহা দ্বারা পূর্ণ থাকে) এবং বায়ু-শূন্যস্থানে
উক্ত পদার্থে প্রতিষ্ঠিত ফ্লাক্সরে
অনুপাতকে বুঝায়।
বৈদ্যুতিক
কারেন্টের ম্যাগনেটিক প্রভাব বা ইফেক্ট (Magnetic effect of electrical current)ঃ
১৮১৯ খৃষ্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেন হেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
পদার্থ বিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিশ্চিয়া ওয়েরস্টেড (১৭৭৭- ১৮৫১) প্রথম লক্ষ করেন যে,
কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার ফলে উক্ত পরিবাহীর
চারদিকে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ বাহিত কোন পরিবাহীর নিকট একটি কম্পাস
কাটা রাখলে এরূপ চৌম্বক-ক্ষেত্রের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় । বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেড
এটাও লক্ষ করেন যে, বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তন করলে কম্পাস-কাটাও বিপরীত দিকে
ঘুরে যায় এবং কারেন্টের মান কমবেশি করলে কাটাটির বিক্ষেপও (Deflection) কমবেশি
হয় । বৈদ্যুতিক কারেন্ট এবং চুম্বকের মধ্যে এই অতি প্রয়োজনীয় ও ঘনিষ্ট সম্পর্ক
নির্ণয়ে বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেডের অবদানের কারণে তাকে বৈদ্যুতিক-চুম্বকত্ব বিজ্ঞানের
জনক' (Father of the Science of Electro-Magnetism) নামে অভিহিত করা হয় এবং তার সম্মানে
চৌম্বক একক “ওয়েরস্টেড" রাখা হয় ।
ম্যাগনেটিক
ফিল্ড এবং কারেন্টের দিক নির্ণয়ে ম্যাক্সওয়েল কর্ক-স্রু রুল ও ফ্লেমিং এর রাইট-হ্যান্ড বর্ণনা
(state ments of Maxwell’s cork screw rule and Flemings right hand rule for determining the direction of the
magnetic field and current)ঃ
ম্যাক্সওয়েলের
কর্ক-স্রু রুল (Maxwell’s Cork Screw rule) ঃ
বিদ্যৎ প্রবাহের কারণে কোন একটি সরল পরিবাহীর চারদিকে
সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্র বৃত্তাকার বল-রেখা দ্বারা চিত্রিত করা যায় ।
অধিকন্তু,
কারেন্ট প্রবাহের দিকের উপর চৌম্বক-ক্ষেত্রের দিক নির্ভর করে । ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে
প্রখ্যাত বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯) এই
রুল উদ্ভাবন করেন ।
বৈদ্যুতিক পরিবাহীর যে দিকে কারেন্ট প্রবাহিত হয়, সে দিকে যদি ডান-পাকের কর্ক স্রু ঘুরানো হয়, তবে বৃদ্ধাংগুলি যে দিকে গুরবে, উহাই বৃত্তাকার চৌম্বক বলরৈখার দিক নির্দেশ করবে।
এটা ম্যাক্সওয়েলের কর্ক-স্রু রুল
নামে খ্যাত । উপরের চিত্রে (চিত্র ঃ ১০.১) দেখানো হয়েছে যে, যখন কারেন্ট পরিবাহীর
মধ্য দিয়ে
বামদিক হতে প্রবাহিত হয়, তখন স্কুকে সেদিকে ঘুরালে বলরেখার দিক ঘড়ির কাঁটার
ঘূর্ণনের দিক হবে।
ক্রোমিং-এর
রাইট-হ্যাড রুল (Fleming's right hand rule)ঃ
আবেশিত বিদ্যুৎ-চালক
বলের (Induced Electromotive Force)
কারণে প্রবাহিত কারেন্টের দিক, ফ্লাক্সের দিক এবং পরিবাহীর গতির
দিকের মধ্যে একটি নিশ্চিত সম্পর্ক আছে। আবেশিত কারেন্টের
দিক
ফ্লেমিং-এর দক্ষিণ-হস্ত বিধি (Right Hand Rule) অথবা
লেনজের সূত্র
প্রয়োগ করে সহজেই নির্ণয় করা যায় । যেখানে
চৌম্বক-ক্ষেত্র স্থির এবং
পরিবাহী গতিতে থাকে, শুধুমাত্র সেখানেই ফ্লেমিং-এর বিধি
প্রযোজ্য।
দক্ষিণ হতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তৰ্জনী এবং মধ্যমাকে
পরস্পর সমকোণে
রেখে বিস্তৃত করলে যদি তৰ্জনী চৌম্বক বলরেখার দিক এবং
বৃদ্ধাঙ্গুলি
পরিবাহী তারের ঘূর্ণনের দিক নির্দেশ করে, তবে মধ্যমা
পরিবাহীতে প্রবাহিত কারেন্টের দিক নির্দেশ করবে।
ফ্লেমিং-এর রাইট-হ্যান্ড রুল জেনারেটরে উৎপন্ন বিদ্যুৎচালক
বল।
এবং কারেন্টের দিক নির্ণয়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়।ফ্লেমিংএর লেফট-হ্যান্ড রুল (Fleming’s left hand rule)ঃ
বাম-হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তৰ্জনী এবং মধ্যমাকে পরস্পর
সমকোণে রেখে বিস্তৃত করলে যদি তাজনী চৌম্বক বলরেখার দিক এবং মধ্যমা পরিবাহীতে
প্রবাহিত কারেন্টের দিক নির্দেশ করে, তবে বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহী-তারের ঘূর্ণনের দিক
নির্দেশ করবে।
এই বাম-হস্ত বিধি (Left-Hand Rule) বৈদ্যুতিক মোটরের
ঘুর্ণন নির্ণয়ের বেলায় প্রয়োগ করা হয়।
উপরোক্ত চিত্রানুযায়ী চৌম্বক-ক্ষেত্রে কারেন্টবহনকারী
পরিবাহীর উপর ক্রিয়াশীল বল
১ । ফ্রান্স,
2। কারেন্ট,
৩। তারের দৈর্ঘ্যের (অর্থাৎ তারের প্যাচের সংখ্যার) উপর
নির্ভরশীল ।
একে সংখ্যাসূচকভাবে প্রকাশ করা যায়
F = B I L নিউটন।
এখানে, F= পরিবাহী- তারের উপর ক্রিয়াশীল বল।
B = ফ্লাক্স-
ডেনসিটি
I = পরিবাহীর
ভিতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট
L = পরিবাহী
- তারের দৈর্ঘ্য বা তারের প্যাচের সংখ্যা।